Sizi Bizu Pat-Turu-Turu
BEKKUNORE JU JU Pattru-Tru ---Free Download Chakma PDF Book ,Song With Lyrics

Thursday, March 12, 2020

চাকমা রাজবংশের ইতিহাস

নিঝুম তালুকদার



আমরা তখন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থী অবস্থায় ছিলাম। সেখানে অনেক ছেলে- মেয়েকে আমার আজু প্রায়ই গল্প শুনাতেন। একদিন আজু আজকের আলোচনা বিষয়টি সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার গল্প বলেছিলেন। আজু যে ভাবে বলেছিলেন ঠিক সেইভাবে ঐ ঘটনার কথা নিয়ে আজকে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সবাই সাথে থাকুন।
চাকমা রাজপরিবার
ইতিহাস অনুসারে সময়টা আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগ। চম্পক নগরের রাজা সাংবুদ্ধ। সাংবুদ্ধর দুই ছেলে- বড় ছেলের নাম বিজয়গিরি এবং ছোট ছেলের নাম সমরগিরি। যুবরাজ বিজয়গিরি যুদ্ধবিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ছেলেবেলা হতেই তিনি রাজ্য জয় ও রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখতেন। চম্পক নগরের ভাবি রাজা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন। 

ত্রিপুরার দক্ষিনে অবস্থিত মগ রাজ্য। মগরা ছিল দুস্য প্রকৃতির। তারা শহর ও গ্রামে লুন্ঠণ এবং মানুষের ওপর অত্যাচার করে বেড়াত । ত্রিপুরা রাজের অধিভূক্ত দক্ষিনাঞ্চলেও তাদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত ছিল না । এসময় ত্রিপুরা রাজ্যে অন্তঃবিপ্লবের সম্ভাবনা থাকায় রাজা মগদের দমনে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। যুবরাজ বিজয়গিরি তার সামরিক অভিযানের শিকার হিসেবে বেছে নিলেন এই মগ রাজ্যকে। এ উদ্দেশ্যে তিনি এক বিপুল সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন। সেনাপতি নিযুক্ত করলেন রাধামনকে। বিজয়গিরি ত্রিপুরা রাজার সাথে সাক্ষাৎ করে সাহায্য কামনা করলে রাজা সানন্দে একদল ত্রিপুরা সৈন্য প্রদান করলেন। বিজয়গিরি ত্রিপুরা সৈন্য বাহিনীর সেনাপতি কুঞ্জধনকে সেনাপতি রাধামনের সহকারী নিযুক্ত করলেন। অতঃপর শুরু হল দক্ষিণ অভিমুখে যাত্রা।

ত্রিপুরা রাজ্যের অধিভূক্ত দক্ষিণের প্রদেশ কালাবাঘা। কালাবাঘা প্রদেশের ঠেওয়া নদীর তীরে শিবির স্থাপন করলেন রাধামনের বাহিনী। রাধামন পাশ্ববর্তী সামান্ত মগ রাজার নিকট দূত প্রেরন করলেন আত্নসমর্পনের জন্য। মগ রাজা আত্নসমর্পনে অস্বীকৃতি জানালেন। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ইধং পর্বতের কাছে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হল যুদ্ধ। রাধামনের শক্তি ও রনকৌশলের নিকট পরাজিত হল মগবাহিনী। মগ রাজা বশ্যতা স্বীকার করলে রাধামন তাকে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে আরো দক্ষিণে রোয়াং রাজ্য (বর্তমানে রামু)আক্রমন করলেন। যুদ্ধে মগ রাজা পরাজিত হয়ে রাধামনের নিকট প্রান ভিক্ষা ও রাজ্য ত্যাগের অনুমতি চাইলেন।পর পর দুটি যুদ্ধে জয় লাভ করে রাধামনের সৈন্য বাহিনীর মনোবল বেড়ে গেল। এর পর তারা আক্রমন করেন নিম্ন আরাকানের অক্সাদেশে।শক্তিশালি অক্সাদেশের মগ সৈন্যদের সাথে ভীষন যুদ্ধে আহত হন রাধামন। সাহায্যে এগিয়ে আসেন সেনাপতি কুঞ্জধন। কুঞ্জধনের সহযোগিতায় রাধামন পরাজিত করে আক্সাদেশের মগ রাজাকে।

আক্সাদেশ জয়ের পর রাধামন সৈন্যদল নিয়ে পূর্বদিকে যাত্রা করেন। জয় করেন কাঞ্চন দেশ ও কালঞ্জ।কালঞ্জ জয়ের মাধ্য দিয়ে বিজয়গিরি তার সামরিক অভিযানের সমাপ্তি টানেন।

দ্বিগ্বিজয়ী বিজয়গিরি কালঞ্জ জয়ের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছে পোষন করেন। এরই মধ্যে তিনি অনেকগুলো রাজ্য জয় করেন। দীর্ঘ বছর পর চম্পক নগর প্রত্যাবর্তনের পথে কালাবাঘাই উপস্থিত হলে তিনি পিতার মৃ্ত্যুর দুঃসংবাদ পান। তিনি আরো জানতে পারেন দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ছোট ভাই সমরগিরি রাজ সিংহাসনে বসেছেন। অভিমান কিংবা ভ্রাতৃস্নেহের কারনে বিজয়গিরি চম্পক নগরে ফিরে গেলেন না। তিনি পূনরায় বিজিত রাজ্যে ফিরে এলেন। বিজয়গিরির অনুরক্ত সৈনাগণও তার সাথে রয়ে গেল। বিজয়গিরি বিজিত রাজ্যেসমুহ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন এক নতুন রা্জ্য, রাজধানী সাপ্রাইকুল। তিনি সৈন্য ও অনুচরবর্গকে স্থানীয় রমনী বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন এবং নিজেও উচ্চ বংশীয় এক রমনী বিয়ে করলেন। শতাব্দীকাল রক্ত ও সংস্কৃতির মিশ্রনের ফলে সৃষ্টি হল এক নতুন জাতি। পরবর্তীতে এদের নাম হল চাকমা জাতি।

মনিজগিরি, উত্তর ব্রহ্মে চাকমা শাসিত এক রাজ্যের রাজধানী। নিম্ন আরাকানে রাজা বিজয়গিরি একটি চাকমা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে রাজা সিরত্তমা চাক রাজ্যের পরিধি আরও বিস্তৃত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে চাকমা রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। পরিশেষে আরাকান রাজ্যের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১১১৮ সালে নিম্ন আরাকান হতে চাকমারা বিতারিত হয়। তারা ক্রমশঃ ব্রহ্মরাজ্যের উত্তরদিকে সরে পড়েন। রাজা মনিজগিরি চাকমাদের সংগঠিত করে উত্তর ব্রহ্মে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম আনুসারে রাজধানীর নাম রাখেন মনিজগিরি।

চাকমা রাজ্যের প্রভাবশালী শাসক রাজা অরুনযুগ(মায়ানমারের ইতিহাসে রাজা ইয়ংজ নামে পরিচিত) ।-অরুনযুগ উত্তর ব্রহ্মে কয়েকটি রাজ্য দখল করেন।তিনি ছিলেন তদানিন্তন ব্রহ্মদেশীয় পরাক্রান্ত রাজাদের মধ্যে অন্যতম। ব্রহ্মদেশীয় রাজা মেঙ্গাদি রাজা অরুণযুগের বিরুদ্দে দুবারযুদ্ধে লিপ্ত হন। দুবারই তাকে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহন করতে হয়।

১৩৩৩ খ্রিঃ। রাজা মেঙ্গাদি রাজা অরুণযুগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লক্ষাধিক সৈন্য প্রেরণ করেন। যুদ্ধে তিনি এক অভিনভ কুটকৌশল গ্রহন করেন ।চাকমা রাজার সাথে মিত্রতার অভিপ্রায়ে তিনি রাজার জন্য এক রূপবতী রমনী ও শতাধিক হাতি প্রেরন করেন। রূপবতী রমনীকে রাজা মেঙ্গাদির বোন হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। উপহার পৌছে দেয়ার অভিপ্রায়ে একজন শাসনকর্তা ও সহাস্রাধিক সৈন্য মনিজগিরিতে প্রবেশ করে। মূল সৈন্যদেরকে দূরে পাহাড়ে লুকিয়ে রাখা হয়। অরুনযুগ আনন্দের সাথে রাজা মেঙ্গাদির উপহার গ্রহণ করেন। রাতে রাজপুরিতে উৎসব শুরু হলে পুরিতে অবস্থানরত সহাস্রাধিক সৈন্য প্রথমে আক্রমন শুরু করেন। অতঃপর পাহাড় থেকে বের হয়ে আসেন লক্ষাধিক সৈন্য। অতি সহজে পরাজয় ঘটে রাজা অরুণযুগের। ছয় শতাব্দী পূর্বে চম্পক নগরের যুবরাজ বিজয়গিরী আরাকান অভিযানের মাধ্যমে ব্রহ্মদেশে চাকমা রাজশক্তির যে সূচনা ঘটান রাজা অরুণযুগের পরাজয়ের মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটে।

ব্রহ্মদেশীয় রাজা মেঙ্গাদির অত্যন্ত সুযোগ্য মন্ত্রী কেরেগ্রি। তার নেতৃত্বে ব্রহ্মসৈন্যরা শক্তিশালী রাজা অরুনযুগকে পরাজিত করে। রাজার পরামর্শে যুদ্ধে তিনি অনৈতিক কুট কৌশল অবলম্বন করলেও তাতে তিনি অনুতপ্ত নন। সকলেই শুধু তার জয়টাকেই দেখবে। আর ইতিহাস! সে তো সবসময় বিজয়ীর পক্ষে।

কেরেগ্রি যুদ্ধে বন্দী রাজা অরুনযুগ, তিন রানী, তিন রাজপুত্র ও দুই রাজকন্যাকে রাজা মেঙ্গাদির নিকট প্রেরণ করেন। কয়েকদিন পর মন্ত্রী বিজিত রাজ্য হতে অসংখ্য হাতী, গয়াল, অপরিমিত স্বর্ণ ও রৌপ্য, রাজকীয় বহু মূল্যবান সম্পদ এবং বন্দী দশ হাজার সৈন্যসহ নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন।

মন্ত্রীর কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে রাজা মেঙ্গাদী তাকে মূল্যবান উপহার প্রদান করেন এবং “মহা প্রাজ্ঞ” খেতাবে ভূষিত করেন। এছাড়াও মন্ত্রীর পুত্রের সাথে বন্দী চাকমা রাজার এক কন্যার বিবাহ দেন। চাকমা রাজার অপর কন্যাকে মেঙ্গাদী নিজেই বিবাহ করেন।

রাজা মেঙ্গাদি বন্দী চাকমা রাজা, রজপুত্রগণদের প্রতি কঠোর হতে পারলেন না। সম্ভবত বিশ্বাসঘাতকতা ও অনৈতিক উপায়ে যুদ্ব জয় করায় নৈতিক দূর্বলতার কারনে চাকমা রাজা ও রজপুত্রগণদের প্রতি মেঙ্গাদি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি রাজা অরুনযুগকে আরাকানের “ক্যামুছা” নামক স্থানে “ক্যাক্যা” জাতির শাসনভার অর্পণ করেন। চাকমা রাজপুত্র সূর্য্যজিতকে “কিউদেজা” এবং রাজপুত্র চন্দ্রজিতকে “মিঞা” অঞলের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। রাজপুত্র শত্রুজিতকে “কংজা” নামক স্থানে জলকর তহসীলদার রূপে প্রেরণ করেন। বন্দী দশ হাজার সৈন্যকে আরাকান রাজ্যের “ইয়ংখ্যং” নামক স্থানে বাস করার অনুমতি প্রদান করেন।
আগরতলা ত্রিপুরা রাজবাড়ী 

রাজা মেঙ্গাদি চাকমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও রাজা মেঙ্গাদির্ মত্যুর পর পরবর্তী রাজারা চাকমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন না। চাকমাদের ওপর চলে নিপীড়ন ও নির্যাতন। ধিরে ধিরে চাকমারা অসহায়, রিক্ত ও নিঃস্ব হয়ে পরে।১৪১৮ খ্রিঃ। চাকমা জাতির ভরসার শেষ প্রতীক রাজা মানেকগিরি (মায়ানমারের ইতিহাসে রাজা মারেক্যাস নামে পরিচিত) বিগত এক শতাব্দী চাকমা জাতি ব্রহ্মদেশের বিভিন্ন আংশে ছড়িয়ে পড়লেও মূল স্রোতের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন রাজা মানেকগিরি।রাজ্যহীন রাজা। রাজা কিছুদিন পুর্বে বঙ্গদেশে গোপনে দূত প্রেরণ করেছিলেন। বঙ্গদেশের সুলতানের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে তার দূত প্রেরণ। দূত সুস্ংবাদ নিয়ে ফিরে এসেছে। সুলতান জালালুদ্দীন মোহাম্মদ শাহ আশ্রয় প্রদানে সম্মত হয়েছেন। রাজা অনেক ভেবে চিন্তে ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগের সি্দ্বান্ত নিয়েছেন। মগ সৈন্য ও রাজকর্মচারীর অত্যচার থেকে বাচার জন্য ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগের বিকল্প নেই। এছাড়াও চাকমা জাতিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারলে ধিরে ধিরে শক্তি অর্জন করে ভবিষ্যতে হয়ত হারানো রাজ্য উদ্বার করা যাবে অথবা নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে। হয়ত মানেকগিরি তার জী্বদ্দশায় সেই সূদিনটি দেখে যেতে পারবে।

রাজবাড়ীতে রাজা মানেকগিরি অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন চাকমা নেতা নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। বৈঠকে মন্ত্রী থৈন সুরেস্বরী সবাইকে ব্রহ্মরাজ্য ত্যাগ ও চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের গুরুত্ব বর্ণনা করছেন। থৈন সুরেস্বরী সুবক্তা ও সুচতুর বুদ্ধির অধিকারি। রাজার অতি প্রিয় ও আস্থাভাজন। রাজা থৈন সুরেস্বরীকে দূত হিসবে বঙ্গদশে পাঠিয়েছিলন। রাজাকে নিরাশ হতে হয়নি। সে নবাবের নিকট হতে দক্ষিন চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের অনুমতি নিয়ে এসেছে। বৈঠকে চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনে সবাইকে রাজি করাতে সুরেস্বরীর খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। চাকমা জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় যে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা তা সবাই উপলব্দি করতে পারছে। কিন্তু ব্রহ্মরাজের নিয়ন্ত্রনাধীন আরাকান রাজা কি তাদেরকে দেশ ত্যগের সুযোগ দিবে? সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল প্রথমে রাজা, রাজার দুই ভাই এবং নেত্রিত্বাস্থানীয় ব্যক্তিরা আরাকান ত্যাগ করবে। পরবর্তীতে অন্যেরা পর্যায়ক্রমে তাদের অনুসরণ করবে। সুরেস্বরী প্রত্যেককে আলাদা ভাবে তাদের করনীয় বুঝিয়ে দিলেন। রাজা মানিকগিরি চাকমা প্রধানদের সাথে আবারো আলোচনায় বসেছেন। রাজা ধির-স্থির ও শান্ত স্বভাবের হলেও আজ তাকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছে। গুপ্তচর মারফত তিনি জানতে পেরেছেন আরাকান রাজসৈন্যরা এগিয়ে আসছে।তাদের আরাকান ত্যাগের পরিকল্পনা আরাকান রাজা জানতে পেরেছে্ন।তাদের পলায়নে বাধা দেওয়ার জন্য আরাকান রাজার সৈন্য প্রেরণ । রাজা মানিকগিরির দুই ভাই রাজাকে পালিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলেন। রাজার পলায়ন নিশ্চিত করতে দুই রাজকুমার আরাকান সৈন্যদের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পরে তারাও রাজাকে অনুসরন করে চট্টগ্রামে পৌছবে। দুই ভাইকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যেতে রাজা কিছুতে রাজি হলেন না। মন্ত্রী ও সর্দারদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজা পালাতে রাজি হলেন। চাকমা জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় তাকে পালাতে হবে। রাজা কয়েকজন সর্দার ও অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। মন্ত্রী, অধিকাংশ সর্দার ও সৈন্যগন রাজকুমারদের সাথে রয়ে গেল।

চাকমারা আরাকান সৈন্যদের সাথে বীরের মত যুদ্ধ করল। যুদ্ধের পাশাপাশি তারা চট্টগ্রামের অভীমূখে অগ্রসর হতে লাগল। যুদ্ধে রাজার ভাই রদংমা ও বহু চাকমা সৈন্য বীরত্বের সাথে লড়াই করে মৃত্যু বরন করলেন। যুদ্ধ শেষে সুলতানের রাজ্যে যাত্রার পথে অনেক চাকমা সৈন্য ও প্রজা অর্ধপথে পাহাড়ে থেকে যায়। রাজার ছোট ভাই কদমগিরি ও মন্ত্রী অবশিষ্ট সৈন্য, সর্দার ও অনুচরসহ চট্টগ্রামে সুলতানের রাজ্যে প্রবেশ করেন। রাজা মানিকগিরি ইতিপূর্বেই সেখানে নিরাপদে পৌছেছে। রাজা ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। রাজা, রাজকুমার, মন্ত্রী, সর্দার, সৈন্য সকলের চোখেই অশ্রু। এ অশ্রু আনন্দের, এ অশ্রু বেদনার।দক্ষিন চট্টগ্রামে অরণ্যঘেরা জনমানবহীন বিস্তৃর্ণ অঞল। বঙ্গদেশের সুলতান চাকমাদের এখানে বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। প্রবল উৎসাহে চাকমারা জঙ্গল কেটে চলছেন। এখানেই তারা গড়ে তুলবে নতুন জনপদ। নতুন চাকমা রাজ্যের ভিত্তি।
চাকমা রাজার রাজ প্রাসাদ যা কাপ্তাই হৃদের পানির নীচে 

রাজা মানিকগিরি নতুন চাকমা রাজ্যটির নাম করলেন "চাকোমাস"। রাজ্যের জন্য শাসন ব্যবস্থা দাড় করালেন। তিনি রাজ্যকে বারোটি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক অঞ্চলেন জন্য একজন দলপতি নির্বাচন করেন। অঞ্চলের দলপতির পদবী হল রোয়াযা। রাজ্য পরিচালনার জন্য রাজা একটি মন্ত্রণা সভা গঠন করেন। মন্ত্রণা সভার সদস্যদের পদবী চেগে (মন্ত্রী)।- সেনাপতির পদবী (সর্দার) এবং সৈন্যদের পদবী (লস্কর)। রাজস্ব আদায়ের জন্য রোয়াযা, আমু, খীসা, রোয়াসই, সইসুখ ইত্যাদি পদবিধারি রাজকর্মচারী তৈরি করলেন। রোয়াযা রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বিচারকার্যও পরিচালনা করবেন।

শিশু রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষা ও সমৃদ্ধ্বি অর্জনের জন্য সকলেই সচেষ্ট হলেন। শতাব্দীকাল নিপীড়িত, লাঞ্জিত জাতি নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। অতীতেও নিম্ন আরাকান হতে বিতাড়িত হয়ে উত্তর ব্রহ্মে তারা সমৃদ্ধ রাজ্য গড়ে তুলেছিল। হারানো গৌরব ফিরে পেতে সকল চাকমাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে চাকমা জনগষ্ঠির একটি বড় অংশই ব্রহ্মদেশে রয়ে যায়। এই হলো আজুর সত্য ঘটনার গল্পটি।
আজুর এই সত্য ঘটনার গল্পের কাহিনীর সাথে অনেকের ইতিহাস লেখকের লেখা কাহিনীর সাথে মিল পেয়েছি। কারণ বহু লেখক লিখেছেন চাকমাদের রাজ্যের নাম "চাকোমাস"। এবং কিছু কিছু ঘটনাবলীও অনেক মিল রয়েছে। তাই নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা  করা হবে। সাথে থাকবেন।


1 comment:

Patturu Turu

Popular Posts